ইসরায়েলের লাগাতার হামলায় আবারও রক্তাক্ত হয়ে উঠেছে গাজা উপত্যকা। বৃহস্পতিবার (১৯ জুন) ভোর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত চলা হামলায় অন্তত ৯২ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। বোমা, ড্রোন ও গুলির ছায়ায় যখন চারদিক মৃত্যুপুরী, তখন তীব্র খাদ্যসংকটে অসহায় মানুষগুলো ত্রাণের জন্য ভিড় করছেন করিডরগুলোতে—যেখানে অপেক্ষা করছে নতুন হামলার ভয়।
নেতজারিম করিডর: ত্রাণের নামে মৃত্যুর ফাঁদ
গাজার উত্তর ও দক্ষিণ অংশকে বিভক্ত করা নেতজারিম করিডর এখন ফিলিস্তিনিদের জন্য হয়ে উঠেছে জীবন-মৃত্যুর সীমানা। ত্রাণের আশায় প্রতিদিন সেখানে ভিড় জমায় শত শত মানুষ। কিন্তু সেই স্থানে বৃহস্পতিবার ইসরায়েলি সেনাদের গুলিতে প্রাণ হারিয়েছেন অন্তত ১৬ জন ফিলিস্তিনি।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী বাসাম আবু শার বলেন,
“রাত ১টার দিকে তারা গুলি ছোড়া শুরু করে। তারপর ট্যাংক, বিমান ও ড্রোন থেকে একযোগে বোমাবর্ষণ করে। আমরা না পারি পালাতে, না পারি কাউকে সাহায্য করতে।”
“ত্রাণ বিতরণস্থল যেন এখন রুটিন টার্গেট”
আল-জাজিরার প্রতিবেদক তারেক আবু আজ্জুম জানাচ্ছেন,
“গাজায় প্রতিদিনের রুটিন হয়ে দাঁড়িয়েছে ত্রাণ বিতরণস্থলে হামলা। মানুষ অনাহারে মরছে। এক বস্তা আটা, কিছু পানি আর সামান্য খাবারের জন্য তারা জীবন ঝুঁকিতে ফেলছে।”
জাতিসংঘ ইতিমধ্যেই গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশনের বিতরণ প্রক্রিয়ায় সামরিকীকরণের অভিযোগ এনেছে, যেটি যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের সমর্থনে পরিচালিত।
চার্জ দিতেও প্রাণ হারায় ১৩ জন
একইদিন গাজার আল শাতি শরণার্থীশিবিরে মোবাইল ফোন চার্জ দিতে জড়ো হওয়া মানুষের উপর ড্রোন হামলায় ১৩ জন নিহত হন। এছাড়া জাবালিয়ায় কয়েকটি ঘরে একযোগে বিমান হামলা চালানো হয়।
গাজার প্রাণহানির চিত্র ভয়াবহ
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া যুদ্ধে এখন পর্যন্ত নিহত হয়েছেন
➡️ ৫৫,৭০৬ জন ফিলিস্তিনি
➡️ আহত হয়েছেন ১,৩০,১০১ জন
এই পরিসংখ্যান শুধু সংখ্যাই নয়—এর প্রতিটি নামের পেছনে আছে একেকটি ধ্বংসপ্রাপ্ত জীবন, নিঃশেষ হওয়া পরিবার।
🕊 বিশ্ব বিবেক কোথায় দাঁড়াবে?
ত্রাণ সংগ্রহ, মোবাইল চার্জ বা আশ্রয়—যেকোনো মানবিক প্রয়োজনে জীবন ঝরে যাওয়ার এই চিত্র প্রশ্ন তোলে বৈশ্বিক মানবিক নীতির ওপরে।
মানবিক করিডরকে মৃত্যুকূপে পরিণত করার দায় কার?