জনপ্রশাসন সংস্কারে আশু ১৮ প্রস্তাব দ্রুত বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত সরকারের

ঢাকা, ২১ জুন:
জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের সুপারিশকৃত ১৮টি আশু বাস্তবায়নযোগ্য প্রস্তাব দ্রুত বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। শুক্রবার প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এক উচ্চপর্যায়ের বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

সভায় সভাপতিত্ব করেন প্রধান উপদেষ্টার মুখ্য সচিব এম সিরাজ উদ্দিন মিয়া। বৈঠকে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগ সংশ্লিষ্ট বাস্তবায়ন পরিকল্পনা উপস্থাপন করে।

দ্রুত বাস্তবায়নের নির্দেশ প্রধান উপদেষ্টার
ছাত্র-শ্রমিক-জনতার অভ্যুত্থানের পর গঠিত অন্তর্বর্তীকালীন সরকার জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতে ছয়টি সংস্কার কমিশন গঠন করে। এর মধ্যে যেসব প্রস্তাব প্রশাসনিকভাবে বাস্তবায়ন সম্ভব, সেগুলো দ্রুত বাস্তবায়নের নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা।

মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ জানায়, পাঁচটি কমিশন থেকে পাওয়া মোট ১২১টি সুপারিশের মধ্যে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের ১৮টি প্রস্তাবকে তাৎক্ষণিকভাবে বাস্তবায়নযোগ্য হিসেবে বাছাই করা হয়েছে।

আটটি প্রস্তাব নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা
বৈঠকে ১৮টি প্রস্তাবের মধ্যে আটটি প্রস্তাবের বাস্তবায়ন পরিকল্পনা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। সেগুলো হলো:

পেট্রলপাম্পে স্বাস্থ্যসম্মত টয়লেট স্থাপন:
আগামী বছরের ২০ জুলাইয়ের মধ্যে দেশের সব পেট্রলপাম্পে নারী-পুরুষের জন্য আলাদা স্বাস্থ্যসম্মত টয়লেট স্থাপনের সময়সীমা নির্ধারণ করা হয়েছে।

মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইট হালনাগাদ ও ডায়নামিক করা:
ওয়েবসাইটে তথ্য হালনাগাদ ও নাগরিক মতামতের সুযোগ রাখার বিষয়ে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। জাতীয় ডেটা ইন্টারঅপারেবিলিটি সিস্টেম দুই মাসের মধ্যে বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সরকারি প্রতিনিধিসহ ম্যানেজিং কমিটি গঠন:
এক মাসের মধ্যে সব কলেজ ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ম্যানেজিং কমিটি পুনর্গঠনের সময়সীমা নির্ধারিত হয়েছে।

বেসরকারি সংস্থার মাধ্যমে কমিউনিটি স্বাস্থ্যকেন্দ্র পরিচালনা:
এক সপ্তাহের মধ্যে এনজিও ও স্বাস্থ্য বিভাগের সঙ্গে সভা করে কার্যক্রম চূড়ান্ত করার সিদ্ধান্ত।

গণশুনানি বাধ্যতামূলক করা:
নিয়মিত গণশুনানির জন্য সেবা দানকারী সব মন্ত্রণালয় ও বিভাগে নির্দেশনা প্রদান।

তথ্য অধিকার আইন ও অফিসিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্ট পর্যালোচনা:
দুটি আইনই সময়সীমা নির্ধারণ করে সংশোধনের উদ্যোগ নেওয়া হবে।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো পুনর্গঠন:
এটিকে ‘বাংলাদেশ পরিসংখ্যান কমিশন’-এ রূপান্তর করা হবে।

ডিজিটাল রূপান্তর ও ই-গভর্নমেন্ট শক্তিশালীকরণ:
সরকারের সব সেবা একটি নাগরিক প্ল্যাটফর্মে অন্তর্ভুক্তির জন্য আইসিটি বিভাগকে সময়াবদ্ধ কর্মপরিকল্পনা গ্রহণের নির্দেশ।

তদারকির জন্য আলাদা ইউনিট গঠনের সিদ্ধান্ত
সভায় জানানো হয়, প্রতিটি মন্ত্রণালয় বাস্তবায়ন টিম গঠন করবে এবং নির্ধারিত সময়ে কর্মপরিকল্পনা জমা দেবে। প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের অধীনে গভর্নেন্স ইনোভেশন ইউনিট (জিআইইউ) একটি তদারকি ইউনিট হিসেবে কাজ করবে। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগও এই প্রক্রিয়ায় নজরদারি চালাবে।

এছাড়া সভায় জানানো হয়, গত কয়েক মাসে সরকার ৫৪টি মন্ত্রণালয়ে মোট ১ হাজার ৬১টি সংস্কারমূলক উদ্যোগ নিয়েছে, যা চলমান প্রশাসনিক সংস্কারের অংশ।

Scroll to Top