ঢাকা, ২১ জুন:
সুইজারল্যান্ডের ব্যাংকগুলোতে বাংলাদেশি ব্যক্তি ও ব্যাংকের আমানত মাত্র এক বছরের ব্যবধানে প্রায় ৩২ গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০২৩ সালে যেখানে এই পরিমাণ ছিল মাত্র ১৮ মিলিয়ন সুইস ফ্রাঁ (প্রায় ২৭৫ কোটি টাকা), ২০২৪ সালে তা লাফিয়ে পৌঁছেছে ৫৮৯.৫৪ মিলিয়ন ফ্রাঁ (প্রায় ৮,৮৩২ কোটি টাকা)।
সুইস ন্যাশনাল ব্যাংকের (এসএনবি) সাম্প্রতিক বার্ষিক প্রতিবেদনে এই তথ্য প্রকাশিত হয়েছে। প্রতিবেদনে আরও দেখা গেছে, বাংলাদেশি ব্যাংকগুলোর আমানত ২০২৩ সালের ৩.৪৮ মিলিয়ন ফ্রাঁ থেকে বেড়ে ২০২৪ সালে দাঁড়িয়েছে ৫৭৬.৬১ মিলিয়নে, যা ১৬৫ গুণেরও বেশি বৃদ্ধি। তবে ব্যক্তি পর্যায়ের আমানত ১২.৬২ মিলিয়নে এসে কিছুটা কমেছে।
অর্থনীতিবিদদের উদ্বেগ
বিশ্লেষকরা বলছেন, দেশের অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা, ডলারের সংকট এবং বিদেশে অর্থ স্থানান্তরের খোলামেলা সুযোগের কারণে এই ঊর্ধ্বগতি ঘটেছে। বিশেষত, ব্যাংক পর্যায়ের আমানত বৃদ্ধিকে অর্থ পাচারের প্রমাণ হিসেবে দেখা হচ্ছে।
স্বচ্ছতা ও তথ্য বিনিময়ের সংকট
২০১৮ সাল থেকে আন্তর্জাতিকভাবে ‘অটোমেটিক এক্সচেঞ্জ অফ ইনফরমেশন’ (এইওআই) কার্যক্রম চালু হয়েছে। তবে বাংলাদেশ এখনও এই প্ল্যাটফর্মে যোগ দেয়নি। প্রতিবেশী দেশ ভারত ও পাকিস্তান ইতোমধ্যে এতে অংশগ্রহণ করছে।
এক অর্থনীতিবিদ বলেন,
“বাংলাদেশে স্বচ্ছতার অভাব থাকায় দেশের নাগরিকরা সহজেই বিদেশে অর্থ লুকিয়ে রাখতে পারছেন।”
২০২২ সালে বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট সুইস কর্তৃপক্ষকে সন্দেহভাজন ৬৭ ব্যক্তির তথ্য জানতে চাইলেও মাত্র একজনের তথ্য পাওয়া গেছে। এর পেছনে বাংলাদেশের আইনগত ও প্রক্রিয়াগত দুর্বলতাকেও দায়ী করা হচ্ছে।
চ্যালেঞ্জ ও করণীয়
সুইস ব্যাংকে এই বিপুল আমানত বৃদ্ধি শুধু অর্থনৈতিক সংকট নয়, বরং দেশের প্রাতিষ্ঠানিক দুর্বলতা ও স্বচ্ছতার অভাবকেও সামনে এনেছে।
অর্থ পাচার রোধে কঠোর আইন প্রণয়ন, আন্তর্জাতিক তথ্য বিনিময়ে অংশগ্রহণ এবং দুর্নীতিবিরোধী কার্যক্রম জোরদার করাই এখন প্রধান চ্যালেঞ্জ।
অন্যথায়, এই ধারা অব্যাহত থাকলে দেশের আর্থিক নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা বিপন্ন হতে পারে।