নেতানিয়াহু থাকবে না পৃথিবীতে কিন্তু ইরান ঠিকই থাকবে

✍️ বিশেষ প্রতিনিধি

রাশিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট ও বর্তমান নিরাপত্তা কাউন্সিলের উপপ্রধান দিমিত্রি মেদভেদেভ এক তীব্র বার্তায় মধ্যপ্রাচ্যের চলমান সংঘাত এবং আন্তর্জাতিক কূটনীতির দ্বৈত নীতিকে কড়া ভাষায় আক্রমণ করেছেন। ২২ জুন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেওয়া এক বিবৃতিতে তিনি বলেন—

“ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু একদিন বিদায় নেবেন, কিন্তু ইরান থাকবে। ইরান একটি প্রাচীন সভ্যতা, একটি দীর্ঘস্থায়ী রাষ্ট্র—যা ইতিহাসে ছিল, আছে এবং ভবিষ্যতেও থাকবে।”

এই বক্তব্য এমন সময় এলো, যখন যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের সাম্প্রতিক যৌথ বিমান হামলা ইরানের পারমাণবিক স্থাপনা গুঁড়িয়ে দিয়েছে বলে দাবি করা হচ্ছে। জবাবে ইরানও সামরিক প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে, যার ফলে অঞ্চলজুড়ে চলছে উত্তেজনা ও যুদ্ধাবস্থা।

🇷🇺 রাশিয়ার অবস্থান ও প্রশ্ন: কেন দ্বৈত মানদণ্ড?
মেদভেদেভ আরও বলেন—

“ইসরায়েলের গোপন পারমাণবিক কর্মসূচি আন্তর্জাতিক নিরাপত্তার জন্য বড় হুমকি। আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি সংস্থা (IAEA) কীভাবে ইসরায়েলের কার্যক্রম নিয়ে চুপ থাকে, সেটাই এখন প্রশ্ন। একদিকে ইরানকে শত শত প্রতিবেদন, তদন্ত ও নিষেধাজ্ঞার মুখে পড়তে হয়, অথচ ইসরায়েলের প্রতি কোনো জবাবদিহিতা নেই।”

⚖️ ‘একই মানদণ্ডে বিচার চাই’ — রাশিয়ার বার্তা
মেদভেদেভের বক্তব্যে স্পষ্টভাবে উঠে এসেছে আন্তর্জাতিক আইন ও ন্যায়বিচারের দ্বিমুখিতা নিয়ে ক্ষোভ। তিনি প্রশ্ন তোলেন,

“কেন ইসরায়েলের জন্য পারমাণবিক কর্মসূচি গ্রহণযোগ্য, আর ইরানের জন্য নয়? এই বিশ্ব কি কেবল শক্তির ভিত্তিতে পরিচালিত হবে, নাকি আন্তর্জাতিক নীতির ভিত্তিতে?”

🧭 বিশ্লেষণ: মধ্যপ্রাচ্যে নতুন কূটনৈতিক বাস্তবতা
বিশ্লেষকদের মতে, মেদভেদেভের এই বিবৃতি কেবল একটি মতামত নয়, বরং রাশিয়ার বৃহৎ কৌশলগত অবস্থানের প্রতিফলন। গত কয়েক বছর ধরেই রাশিয়া ইরান, সিরিয়া ও চীনের সঙ্গে জোটবদ্ধ হয়ে পশ্চিমা আধিপত্যের বিরুদ্ধে একটি বিকল্প শক্তি গড়ে তুলছে।

ইসরায়েল-পন্থী নীতির বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়া রাশিয়ার নতুন কোনো বিষয় নয়, তবে এই মুহূর্তে প্রকাশ্যে ইরানকে সমর্থন করা এবং নেতানিয়াহুর ভবিষ্যৎ নিয়ে ভবিষ্যদ্বাণী করা, এটাই দেখায় যে রাশিয়া কৌশলগতভাবে ইরানকেই দীর্ঘমেয়াদি শরিক হিসেবে গণ্য করছে।

🧠 অর্থনৈতিক ও সামরিক বাস্তবতায় তাৎপর্যপূর্ণ বার্তা
মেদভেদেভের এই বক্তব্য মধ্যপ্রাচ্যে শক্তির ভারসাম্যে বড় ধরনের মনস্তাত্ত্বিক প্রভাব ফেলতে পারে। যেমন:

🇮🇱 ইসরায়েলের ওপর চাপ তৈরি হবে—তারা সত্যিই আন্তর্জাতিক আইন মানে কি না।

🇮🇷 ইরান এই বার্তা থেকে মনোবল পাবে—বিশ্বের পরাশক্তিগুলোর কেউ কেউ তাদের ‘অবিচারিত শিকার’ বলেই ভাবছে।

🌍 বিশ্বব্যাপী পরমাণু নিরস্ত্রীকরণ আলোচনা এখন আর কেবল ইরান-কেন্দ্রিক থাকবে না; বরং ইসরায়েলের গোপন কর্মসূচিও এখন প্রশ্নের মুখে।

🧩 শেষ কথা: “রাষ্ট্র থাকে, সরকার আসে-যায়”
মেদভেদেভের কথার মাঝে একটি গভীর রাজনৈতিক দর্শন আছে:

“নেতানিয়াহু থাকবেন না, বিদায় নেবেন; কিন্তু ইরান থাকবে।”

এটা কেবল একটি ভূরাজনৈতিক সতর্কতা নয়, বরং শক্তি, রাষ্ট্র ও সভ্যতার মধ্যে পার্থক্য বোঝার আহ্বান।

Scroll to Top