মধ্যপ্রাচ্যে চলমান উত্তেজনার প্রেক্ষাপটে হরমুজ প্রণালি বন্ধের পদক্ষেপ নিয়েছে ইরান, যা বৈশ্বিক জ্বালানি সরবরাহ এবং অর্থনীতিতে ভয়াবহ প্রভাব ফেলতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন বিশ্লেষকরা। বিশেষ করে, ইরানে মার্কিন হামলার পর এই কৌশলগত জলপথে উত্তেজনা বেড়েছে চরমে।
তেলবাহী জাহাজের দিক পরিবর্তন
রোববার হরমুজ প্রণালিতে প্রবেশ করা দুই বিশাল তেলবাহী জাহাজ—‘Coswisdom Lake’ ও ‘South Loyalty’—হঠাৎ দিক পরিবর্তন করে ওই এলাকা ত্যাগ করে। ব্লুমবার্গের তথ্যমতে, যুদ্ধ পরিস্থিতির ঝুঁকির কারণেই জাহাজ দুটি এমন সিদ্ধান্ত নেয়।
বিশ্বের অর্থনীতির জন্য হুমকি
প্রতিদিন প্রায় ২০ মিলিয়ন ব্যারেল তেল এই প্রণালি দিয়ে পরিবাহিত হয়, যা বিশ্বের মোট জ্বালানি সরবরাহের এক-পঞ্চমাংশ। মার্কিন জ্বালানি তথ্য প্রশাসনের (EIA) মতে, হরমুজ প্রণালি বিশ্বব্যাপী জ্বালানি পরিবহনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ রুটগুলোর একটি। এর যেকোনো ব্যাঘাত শুধু খরচ বাড়াবে না, বরং মুদ্রাস্ফীতি ও মন্দার আশঙ্কা বাড়িয়ে তুলবে।
বাজারে তেলের দামে প্রভাব
২১ জুন ইরানে মার্কিন বিমান হামলার পরপরই ব্রেন্ট ক্রুড তেলের দাম বেড়ে প্রতি ব্যারেল ৮০ ডলারের ওপরে উঠে যায়, যা জানুয়ারির পর প্রথম। যুদ্ধের আগ পর্যন্ত এই দাম ৬০–৭৫ ডলারের মধ্যে ছিল।
এশিয়ার ওপর সবচেয়ে বেশি প্রভাব
গত বছর হরমুজ প্রণালি হয়ে যাওয়া ৮৪% অপরিশোধিত তেল ও ৮৩% তরল গ্যাস গিয়েছিল এশিয়ার বিভিন্ন দেশে। শুধু চীনই এ বছরের প্রথম প্রান্তিকে এ পথ ব্যবহার করে প্রতিদিন ৫.৪ মিলিয়ন ব্যারেল তেল আমদানি করেছে। ভারত ও দক্ষিণ কোরিয়ার আমদানি যথাক্রমে ছিল ২.১ ও ১.৭ মিলিয়ন ব্যারেল।
যুক্তরাষ্ট্রের হুঁশিয়ারি
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও হরমুজ প্রণালি বন্ধের পদক্ষেপকে ‘অর্থনৈতিক আত্মঘাত’ হিসেবে অভিহিত করেছেন। তার মতে, এর ফলে চীন সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। রুবিও জানিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্র এ ধরনের পরিস্থিতি মোকাবেলায় প্রয়োজনীয় সামর্থ্য রাখে এবং প্রয়োজন হলে প্রতিক্রিয়া জানাতে প্রস্তুত।