মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলোতে হামলা চালানোর পর কড়া প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে উত্তর কোরিয়া। দেশটি একে আন্তর্জাতিক আইনের চরম লঙ্ঘন এবং সার্বভৌমত্বে হস্তক্ষেপ বলে আখ্যায়িত করেছে।
উত্তর কোরিয়ার তীব্র নিন্দা
উত্তর কোরিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন মুখপাত্র আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, “এই ধরনের আগ্রাসন জাতিসংঘ সনদের পরিপন্থী এবং একটি স্বাধীন রাষ্ট্রের আঞ্চলিক অখণ্ডতা ও নিরাপত্তাকে ভেঙে ফেলেছে। যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল যৌথভাবে সংঘাত ছড়ানোর কাজ করছে এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উচিত একজোট হয়ে এসব পদক্ষেপের নিন্দা জানানো।”
আল জাজিরাকে দেওয়া এক মন্তব্যে তিনি বলেন, “মধ্যপ্রাচ্যে বর্তমান উত্তেজনার জন্য দায়ী ইসরায়েলের যুদ্ধবাজ আচরণ ও আঞ্চলিক দখলদারিত্ব। আর পশ্চিমা বিশ্বের পক্ষপাতমূলক সমর্থন এসব কর্মকাণ্ডকে আরও উসকে দিচ্ছে।”
ইরান-উত্তর কোরিয়ার সম্পর্ক ও ভূরাজনৈতিক বাস্তবতা
উল্লেখযোগ্য যে, ইরান ও উত্তর কোরিয়ার মধ্যে দীর্ঘদিনের সামরিক ও কূটনৈতিক সহযোগিতা রয়েছে। দুই দেশই পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার মধ্যে রয়েছে এবং প্রতিরক্ষা ও প্রযুক্তি আদান–প্রদানের দিক থেকে একে অপরের ওপর নির্ভরশীল।
বিশ্লেষকদের মতে, উত্তর কোরিয়ার এই বিবৃতি শুধু ইরানের প্রতি সমর্থন নয়—এটি বিশ্ব রাজনীতিতে পশ্চিমা জোটবিরোধী জোটের দৃঢ় অবস্থানও তুলে ধরছে।
সম্প্রতি কী ঘটেছে?
২১ জুন রাতের দিকে মার্কিন বাহিনী ইরানের ফোরদো, নাতাঞ্জ ও ইস্পাহান পারমাণবিক স্থাপনায় বিমান হামলা চালায়। হামলায় স্থাপনাগুলো আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হলেও কোনো প্রাণহানির খবর পাওয়া যায়নি। তবে এর আগে ১৩ জুন ইসরায়েলের চালানো বড় ধরনের হামলায় তেহরানসহ বিভিন্ন স্থানে ৪০০-র বেশি ইরানি নাগরিক নিহত হন, যাদের মধ্যে ছিলেন জ্যেষ্ঠ সামরিক কর্মকর্তা ও পরমাণু বিজ্ঞানীরা।
ইরানের পাল্টা জবাব
ইসরায়েলের ওই হামলার জবাবে ইরান ‘অপারেশন ট্রু প্রমিস-৩’ চালু করে। এই অভিযানে ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে ইসরায়েলের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় আঘাত হানা হয়, যার ফলে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়—যদিও হতাহতের সংখ্যা তুলনামূলকভাবে কম।
উপসংহার
উত্তর কোরিয়ার তীব্র নিন্দা মধ্যপ্রাচ্যের চলমান সংঘাতকে আন্তর্জাতিক মেরুকরণের আরও গভীরে নিয়ে গেছে। ইরান-ইসরায়েল বিরোধ এখন শুধু দুই দেশের সীমিত যুদ্ধ নয়—বরং এটি বিশ্বরাজনীতির একটি স্পষ্ট বিভক্তি ও কৌশলগত অবস্থান নির্দেশ করছে।