গাজার বেসামরিক ফিলিস্তিনিদের ওপর ইসরায়েলি সেনাদের সরাসরি গুলির নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল—এমন চাঞ্চল্যকর তথ্য প্রকাশ করেছে ইসরায়েলেরই প্রভাবশালী পত্রিকা হারেৎজ। শুক্রবার (২৭ জুন) প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, সেনারা স্বীকার করেছে যে তারা নিরস্ত্র মানুষের ওপর গুলি চালিয়েছে, আর এই আদেশ এসেছে সরাসরি সামরিক কমান্ডারদের কাছ থেকে।
যুদ্ধাপরাধের তদন্ত নির্দেশ
এই স্বীকারোক্তির পর ইসরায়েল সেনাবাহিনী সম্ভাব্য যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে অভ্যন্তরীণ তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে। এ ঘটনা আন্তর্জাতিক মহলে উদ্বেগ ও ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে।
গণহত্যার মঞ্চে রূপ নিয়েছে সহায়তা কেন্দ্র
গাজার তথ্যমতে, খাদ্য সহায়তা নিতে এসে শুধু জিএইচএফ-এর বিতরণ কেন্দ্রেই প্রাণ হারিয়েছেন অন্তত ৫৪৯ জন, আহত হয়েছেন ৪ হাজার ৬৬ জন। স্থানীয়রা বলছেন, এই কেন্দ্রগুলো এখন ফিলিস্তিনিদের জন্য “মৃত্যুকূপে” পরিণত হয়েছে।
একজন ইসরায়েলি সেনা হারেৎজ-কে বলেন,
“আমরা ট্যাঙ্ক থেকে গুলি চালিয়েছি, গ্রেনেড ছুড়েছি, এমনকি ঘন কুয়াশার মধ্যেও নিরীহ মানুষের ওপর গুলি চালিয়েছি। এটা যেন ছিল একটা হত্যার মাঠ।”
আরেকজন জানান,
“প্রতিদিন ১ থেকে ৫ জন মারা যাচ্ছিল। এটা ছিল একটি দমন কৌশল।”
অস্বীকারে ইসরায়েল, নিন্দায় জাতিসংঘ
ইসরায়েলি সরকার ও সেনাবাহিনী অভিযোগগুলো অস্বীকার করে একে “রক্তমিথ্যা” বলে অভিহিত করেছে। তবে জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস বলেন,
“গাজায় আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘিত হচ্ছে—এটা স্পষ্ট। জবাবদিহি অপরিহার্য।”
চিকিৎসা সংস্থা এমএসএফ জানিয়েছে,
“মানবিক সহায়তার নামে চলছে গণহত্যা।”
প্রাণহানির ভয়াবহ পরিসংখ্যান
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া ইসরায়েলি অভিযানে ৫৬,৩৩১ জন নিহত এবং ১,৩২,৬৩২ জন আহত হয়েছেন।
এমন পরিস্থিতিতে হারেৎজের এই তদন্ত প্রতিবেদন নতুন করে প্রশ্ন তুলেছে, গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর আসল উদ্দেশ্য কী এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এই মানবাধিকার লঙ্ঘনের জবাবদিহি কবে নিশ্চিত করবে?