২০২২ সালে ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলার পর থেকে ন্যাটোর সবচেয়ে বড় উদ্বেগের কেন্দ্রে রয়েছে পূর্ব সীমান্তের প্রতিরক্ষা। এরই মধ্যে রাশিয়া ও বেলারুশের সীমান্তঘেঁষা পাঁচটি ন্যাটোভুক্ত দেশ—ফিনল্যান্ড, এস্তোনিয়া, লাটভিয়া, লিথুয়ানিয়া ও পোল্যান্ড—সীমান্তে নজরদারি ও প্রতিরক্ষা কাঠামোয় ব্যাপক বিনিয়োগ করেছে।
❗নতুন পদক্ষেপ: অটোয়া কনভেনশন থেকে সরে গিয়ে মাইন বসানোর উদ্যোগ
এই পাঁচটি দেশ সম্প্রতি ১৯৯৭ সালের অটোয়া কনভেনশন থেকে নিজেদের প্রত্যাহার করে নিয়েছে, যার ফলে তারা মানববিরোধী ল্যান্ড মাইন উৎপাদন, সংরক্ষণ ও ব্যবহারে আইনি বাধামুক্ত হয়েছে।
এই চুক্তি অনুসারে:
- মানববিরোধী মাইন নিষিদ্ধ,
- উৎপাদন ও পরিবহন নিষিদ্ধ,
- ১৬৪টি দেশ স্বাক্ষরকারী,
- তবে যুক্তরাষ্ট্র, চীন, রাশিয়া স্বাক্ষর করেনি।
বিশ্লেষকরা বলছেন, ২০২৫ সালের পর থেকেই এই দেশগুলো দ্রুত স্থল মাইন স্থাপন ও উৎপাদনে সক্ষম হবে।
🧨 কেন মাইন বিতর্কিত?
- ২০২৩ সালে বিশ্বজুড়ে মাইন বিস্ফোরণে ৬,০০০ মানুষ হতাহত হন, যার মধ্যে ৮০% ছিলেন বেসামরিক, অনেকে শিশু।
- যুদ্ধ শেষে দীর্ঘ সময় ধরে মাইন সক্রিয় থাকে, যা পরিবেশ, জীববৈচিত্র্য এবং মানুষের জীবনধারায় বিপর্যয় ডেকে আনে।
- ৫৮টি দেশ এখনও বিপুল সংখ্যক স্থলমাইন দ্বারা দূষিত।
🛡️ ‘নতুন লৌহ পর্দা’: সীমান্ত প্রতিরক্ষা পরিকল্পনা
- মাইন ছাড়াও নির্মিত হচ্ছে:
- বেড়া ও প্রাচীর
- ড্রোন প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা
- নজরদারি সিস্টেম
- পরিখা ও গোপন সেচ ব্যবস্থা
- গাছ রোপণ করে রাস্তা ঢেকে ফেলা
🔶 উল্লেখযোগ্য অঞ্চল:
- সুওয়ালকি গ্যাপ: লিথুয়ানিয়া ও পোল্যান্ডের মাঝের মাত্র ৬৫ কিমি দীর্ঘ করিডোর, যেটি রাশিয়ার জন্য সামরিকভাবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
- এই গ্যাপ দখল করলে ন্যাটোর পূর্বাঞ্চল বিচ্ছিন্ন হতে পারে।
🇱🇹 লিথুয়ানিয়ার ভূমিকা ও বিনিয়োগ
- প্রায় ৮০০ মিলিয়ন ইউরো বিনিয়োগে মাইন উৎপাদন প্রকল্প গ্রহণ করেছে লিথুয়ানিয়া।
- দেশটির প্রতিরক্ষামন্ত্রী বলেন, “রাশিয়া মাইন তৈরি করছে, অথচ ইউরোপ ধ্বংস করছে।”
🟠 মানবাধিকার সংস্থাগুলোর উদ্বেগ
- হ্যান্ডিক্যাপ ইন্টারন্যাশনাল জানিয়েছে, মাইন একটি দীর্ঘমেয়াদি মানবিক বিপর্যয় সৃষ্টি করে।
- ইভা মারিয়া ফিশার বলেন: “এই অস্ত্র বাছাই করা আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত। দেশকে রক্ষার বিকল্প অনেক আছে। যুদ্ধ-পরবর্তী সময়েও মানুষকে ভোগাতে পারে এমন অস্ত্র দিয়ে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যায় না।”