বদনজর সম্পর্কে হাদিসে কী বলা হয়েছে?

রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন:

“বদনজর সত্য। এটি এমন এক প্রভাব—যা মানুষকে উঁচু স্থান থেকে নিচে ফেলে দেয়।”
(মুসনাদে আহমাদ: ২৪৭৩)

এ থেকে বোঝা যায়, বদনজরের প্রভাব বাস্তব এবং ক্ষতিকর।


❖ সাহাবিদের জীবনে বদনজরের ঘটনা

আবু সাহাল ইবনে হুনাইফ (রা.)-এর শরীর দেখে আমের ইবনে রবিআ (রা.) প্রশংসা করলে আবু সাহাল গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন। বিষয়টি জানার পর রাসুল (সা.) আমেরকে অজু করতে বলেন এবং সেই অজুর পানি সাহালের শরীরে ঢেলে দিতে বলেন।
অজুর পানি শরীরে প্রয়োগের পর সাহাল সুস্থ হয়ে ওঠেন। পরে রাসুল (সা.) বলেছিলেন:

“তুমি যখন তোমার ভাইয়ের শরীর সুন্দর দেখলে, তখন বরকতের দোয়া করলে না কেন?”
(মুআত্তা মালেক)


❖ কোরআনে বদনজরের ইঙ্গিত

“কাফেররা যখন উপদেশ শোনে, তখন তারা যেন তাদের দৃষ্টি দিয়ে তোমাকে আছড়ে ফেলবে…”
(সুরা কলম: ৫১)

তাফসিরে ইবনে কাসিরে বলা হয়—এই আয়াতে বদনজরের বাস্তবতার কথাই বলা হয়েছে। আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, এই দৃষ্টিই হলো বদনজর, যা হিংসার কারণে একজনকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে, যদি আল্লাহ রক্ষা না করেন।


❖ বদনজর লাগার সম্ভাব্য লক্ষণ

  • হঠাৎ শরীরে জ্বর ওঠা বা দুর্বলতা
  • শিশুর অতিরিক্ত কান্না ও অস্বাভাবিক আচরণ
  • উন্নতির ধারাবাহিকতায় হঠাৎ ব্যাঘাত
  • অনাকাঙ্ক্ষিত দুর্ঘটনা বা ব্যর্থতা

❖ বদনজর থেকে বাঁচার ইসলামি আমল

১. বরকতের দোয়া করা:
কাউকে দেখে ঈর্ষা নয়, বরং বলুন:

  • “বারাকাল্লাহু ফিহি” (আল্লাহ এতে বরকত দিন)
  • “মাশা আল্লাহ, লা হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ”

২. প্রতিদিনের রুটিন আমল:

  • আয়াতুল কুরসি
  • সুরা ইখলাস, ফালাক ও নাস
  • সকালে ও সন্ধ্যায় এসব পড়ে নিজের ওপর ফুঁ দিন।

৩. রাসুল (সা.)-এর দোয়া:

“উইজুকুমা বিকালিমাতিল্লাহিত তাম্মাতি মিন কুল্লি শাইতানিন ওয়া হাম্মাতিন ওয়া মিন কুল্লি আইনিন লাম্মাতিন।”
👉 অর্থ: “আল্লাহর পূর্ণ কালামের মাধ্যমে আমি তোমাদের শয়তান, বিষধর প্রাণী এবং বদনজর থেকে রক্ষা কামনা করছি।”
(সহিহ বুখারি)

এই দোয়া শিশুসন্তানদের জন্য প্রতিরক্ষা হিসেবে ব্যবহার করতেন রাসুল (সা.)।


পরামর্শ ও করণীয়

  • নিজের বা সন্তানের প্রশংসা করলে বরকতের দোয়া আবশ্যক।
  • হিংসা, আত্মতুষ্টি বা অহংকার পরিহার করুন।
  • কারও প্রতি ঈর্ষা প্রকাশ না করে তাঁর জন্য মঙ্গলকামনা করুন।
  • অসুস্থতা বা অস্বাভাবিক কিছু ঘটলে বদনজরের সম্ভাবনা মাথায় রেখে কোরআনি আমল করুন।

🔚 উপসংহার

ইসলামে বদনজরকে হালকাভাবে নেওয়ার সুযোগ নেই। এটি বাস্তব এবং ক্ষতিকর। রাসুল (সা.) এর প্রভাব ও প্রতিকার দুটোই আমাদের শিখিয়ে গেছেন। তাই আসুন, আমরা নিজেরা হিংসা ও নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে বিরত থাকি এবং অন্যের জন্য দোয়া করি। সেই সঙ্গে বদনজর থেকে রক্ষার জন্য নিয়মিত আমল ও সুরক্ষামূলক দোয়াগুলো পালন করি।

“আল্লাহ আমাদের সবাইকে বদনজর, হিংসা ও শয়তানি প্রভাব থেকে হিফাজত করুন।”
আমিন। 🕊️

Scroll to Top