চিকিৎসাবিজ্ঞানে আলট্রাসাউন্ড শুধুই রোগীর ভেতরের ছবি দেখানোর মাধ্যম নয়; এবার এটি অস্ত্রোপচার ছাড়া ক্যানসার চিকিৎসার নতুন পথ খুলছে। যুক্তরাষ্ট্রের মিশিগান বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োমেডিকেল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ঝেন সু decades ধরে গবেষণা করে এমন প্রযুক্তি উদ্ভাবন করেছেন, যা উচ্চ ফ্রিকোয়েন্সি শব্দতরঙ্গের মাধ্যমে টিউমার ধ্বংস করতে পারে।
হিস্টোট্রিপসি: ক্যানসারের জন্য আলট্রাসাউন্ডের নতুন পদ্ধতি
ঝেন সু এবং তার দল প্রথমে শূকরের ওপর পরীক্ষা চালিয়ে দেখেন, এক মিনিটের আলট্রাসাউন্ড প্রয়োগেই টিস্যুতে ছোট গর্ত তৈরি হয়। এই পদ্ধতি পরে ‘হিস্টোট্রিপসি’ নামে পরিচিত হয়। ২০২৩ সালে লিভার টিউমারের চিকিৎসায় মার্কিন এফডিএ অনুমোদন দেয়। পরবর্তীতে এটি ইউরোপে, বিশেষ করে যুক্তরাজ্যের ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিস (NHS)-এ পাইলট ভিত্তিতে ব্যবহার শুরু হয়।
ক্যানসার চিকিৎসার সুবিধা
- অস্ত্রোপচারমুক্ত ও ব্যথামুক্ত
- রোগী পরবর্তী দিনেই বাড়ি ফিরতে পারে
- সাধারণত ১–৩ ঘণ্টায় চিকিৎসা সম্পন্ন হয়
- টিউমার ধ্বংসের পাশাপাশি মেটাস্ট্যাটিক রোগ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করতে পারে
কিভাবে কাজ করে?
হিস্টোট্রিপসি উচ্চ ফ্রিকোয়েন্সি আলট্রাসাউন্ড তরঙ্গ ব্যবহার করে টিউমারের ছোট অংশের ওপর কেন্দ্রিভূত হয়। তরঙ্গগুলো মাইক্রোবাবল তৈরি করে এবং তা বিস্ফোরিত হয়ে টিস্যু ভাঙে। লিভার ক্যানসারের ক্ষেত্রে এটি রোবটিক ট্রান্সডিউসার দিয়ে সুনির্দিষ্টভাবে পরিচালিত হয়।
সীমাবদ্ধতা ও সতর্কতা
- সব ধরনের ক্যানসারে কার্যকর নাও হতে পারে
- হাড় বা গ্যাসযুক্ত অঙ্গের ক্ষেত্রে ব্যবহার ঝুঁকিপূর্ণ
- চিকিৎসার পরে ক্যানসার আবার ফিরে আসতে পারে কিনা তা এখনও নিশ্চিত নয়
- আশপাশের সুস্থ টিস্যু ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনা আছে
অতীত ও অন্যান্য পদ্ধতি
হিস্টোট্রিপসির আগেও হাই-ইনটেনসিটি ফোকাসড আলট্রাসাউন্ড (HIFU) প্রোস্টেট ক্যানসার ও কিছু স্তন ক্যানসারে ব্যবহার হয়। HIFU শক্তিশালী শব্দ তরঙ্গ দিয়ে তাপ সৃষ্টি করে টিস্যু ‘রান্না’ করে ফেলে, যেখানে হিস্টোট্রিপসিতে তাপ উৎপন্ন হয় না।
ভবিষ্যতের সম্ভাবনা
ঝেন সু বলেন, “আলট্রাসাউন্ড ক্যানসারের জাদুকরী চিকিৎসা নয়, তবে এটি রোগীদের অপ্রয়োজনীয় কষ্ট থেকে রক্ষা করতে পারে।” চলমান গবেষণা ও উন্নত প্রযুক্তি কেমোথেরাপি ও রেডিয়েশনের ঝুঁকি কমিয়ে, ক্যানসার চিকিৎসায় নতুন দিগন্ত খুলতে পারে।
সংক্ষেপে: আলট্রাসাউন্ড ক্যানসার চিকিৎসায় অস্ত্রোপচারমুক্ত, দ্রুত আরোগ্য এবং নিরাপদ একটি বিকল্প হয়ে উঠছে, যা ভবিষ্যতে রোগীর জীবনমান এবং চিকিৎসার ফলাফল উন্নত করতে পারে।
