ঢাকা, ২১ জুন:
চতুর্থ প্রজন্মের বেসরকারি ইউনিয়ন ব্যাংক পিএলসি থেকে নামে-বেনামে বিপুল পরিমাণ ঋণ নিয়ে আত্মসাৎ করেছে দেশের বিতর্কিত শিল্পগোষ্ঠী এস আলম গ্রুপ। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, ব্যাংকটির বিতরণ করা মোট ঋণের ৬২ শতাংশের বেশি অর্থাৎ ১৭ হাজার ২২৯ কোটি টাকা নিয়েছে এস আলম গ্রুপ, যার সিংহভাগ এখন খেলাপিতে পরিণত হয়েছে।
ব্যাংকটির চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জ শাখা থেকে সর্বোচ্চ ঋণ বিতরণ হয়েছে। এখান থেকে ২ হাজার ৪৫২ কোটি টাকা ঋণ দেওয়া হয়, যার ৯৯.৩৮ শতাংশ বা ২ হাজার ৪৩৭ কোটি টাকা এখন খেলাপি।
একটি শাখা, এক গ্রুপ, শতকোটি টাকার লেনদেন
বাংলাদেশ ব্যাংকের তদন্তে উঠে এসেছে, ৩৭টি নামে-বেনামে প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে এস আলম গ্রুপ খাতুনগঞ্জ শাখা থেকে এই বিপুল অঙ্কের টাকা তুলেছে। এই প্রতিষ্ঠানগুলোর অধিকাংশই গ্রুপটির চেয়ারম্যান সাইফুল আলম মাসুদের আত্মীয়, ঘনিষ্ঠ, কর্মকর্তা-কর্মচারী অথবা তাদের প্রভাবাধীন।
ব্যাংক কর্মকর্তাদের ভাষ্যে দুর্নীতির স্বীকৃতি
ইউনিয়ন ব্যাংকের ভাইস প্রেসিডেন্ট ও খাতুনগঞ্জ শাখার ব্যবস্থাপক এম রেজাউল করিম জানান, ঋণগ্রহীতাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া শুরু হয়েছে। ইতিমধ্যে লিগ্যাল নোটিশ পাঠানো হয়েছে এবং প্রয়োজন হলে মামলা করা হবে। তবে বেশির ভাগ ঋণের বিপরীতে কোনো জামানত নেই, যা আদায় প্রক্রিয়াকে আরও জটিল করে তুলেছে।
ব্যাংকের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান,
“এস আলম গ্রুপ যখনই টাকার প্রয়োজন হতো, খাতুনগঞ্জ শাখা ছিল তাদের মানিব্যাগের মতো। কোনো কাগজপত্র ছাড়াই বিভিন্ন মেয়াদে ব্যবসার নামে টাকা সরানো হয়েছে।”
ঋণের একটি অংশের বিবরণ
এস আলম গ্রুপের নামে যেসব প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ঋণ নেওয়া হয়েছে, তাদের মধ্যে কয়েকটি উল্লেখযোগ্য হলো:
মা-মণি করপোরেশন – ১০৯ কোটি টাকা
ইকো ট্রেড কর্নার – ১০৪ কোটি টাকা
ভিক্টোর করপোরেশন – ৮৬ কোটি টাকা
চৌধুরী অ্যান্ড হোসাইন ট্রেড লিংক – ৯১ কোটি টাকা
শাহ আমানত ট্রেডার্স – ৮১ কোটি টাকা
রেইনবো বিজনেস অ্যান্ড ট্রেডিং হাউস – ৭৭ কোটি টাকা
ডেলিগেট ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল – ৬৩ কোটি টাকা
জাভা রিয়েল এস্টেট – ১৬ কোটি টাকা
ফাতেমা শিপিং লাইনস – আড়াই কোটি টাকা
বিদেশে পালিয়ে গেছেন কর্ণধার
২০২৪ সালের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকে এস আলম গ্রুপের চেয়ারম্যান সাইফুল আলম মাসুদ ও তাঁর পরিবারের কেউ দেশে ফেরেননি। পাওনা আদায়ে ব্যাংকগুলো এবং দুদক একাধিক গ্রেপ্তারি পরোয়ানা ও দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। অনেকে সম্পত্তি নিলামেও তুলেছে।
ঋণ বিতরণে অনিয়মে জড়িত কেন্দ্রীয় ব্যবস্থাপনা
ব্যাংক কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বিতরণ করা ঋণগুলোর বেশিরভাগই এস আলম গ্রুপের প্রভাবাধীন কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের নির্দেশনায় দেওয়া হয়েছে। ফলে শাখাগুলোর ভূমিকা সীমিত ছিল।