আন্তর্জাতিক ডেস্ক | ২২ জুন ২০২৫ | আলজাজিরা অবলম্বনে
ইরানে মার্কিন হামলার পর ডোনাল্ড ট্রাম্পের ডানপন্থি রাজনৈতিক জোটে স্পষ্ট বিভাজন দেখা দিচ্ছে। তার ঘনিষ্ঠ সহযোগীদের মধ্যে একাংশ এই পদক্ষেপকে ‘সামরিক সাফল্য’ হিসেবে দেখলেও, অপর অংশ এটিকে যুক্তরাষ্ট্রকে আরেকটি দীর্ঘমেয়াদি এবং অপ্রয়োজনীয় যুদ্ধে জড়ানোর বিপজ্জনক সূচনা বলে অভিহিত করছেন।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এ সিদ্ধান্তের ফলে ট্রাম্পের নির্বাচনী অবস্থান দুর্বল হতে পারে, যা ২০২৪ সালের নির্বাচনের অন্যতম স্তম্ভ ছিল—”বিদেশি যুদ্ধে না জড়ানোর প্রতিশ্রুতি”।
😠 ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠদের প্রকাশ্য ক্ষোভ
গত ১৩ জুন ইসরায়েলের ইরানে সরাসরি হামলার পর, ওয়াশিংটনের সহায়তায় যুক্তরাষ্ট্রও ইরানের তিনটি পারমাণবিক স্থাপনায় বোমা বর্ষণ করে। এ ঘটনার পর থেকেই ট্রাম্পের রাজনৈতিক আন্দোলনের মধ্য থেকে ভিন্নমত বের হয়ে আসতে শুরু করে।
‘মেক আমেরিকা গ্রেট এগেইন (MAGA)’ আন্দোলনের শীর্ষ নেতাদের অনেকে এই হামলার বিরোধিতা করছেন। এর মধ্যে রয়েছেন টাকার কার্লসন, স্টিভ ব্যানন, ম্যাট গেটজ, মারজোরি টেলর গ্রিন ও জশ হোলি।
টাকার কার্লসন বলেন, “এটা সেই ট্রাম্প না, যাকে আমরা সমর্থন করেছিলাম। মধ্যপ্রাচ্যে আরেকটি যুদ্ধ আমাদের প্রজন্মের জন্য অভিশাপ।”
স্টিভ ব্যানন এক ভিডিও বার্তায় বলেন, “নেতানিয়াহু আমেরিকাকে নিজের যুদ্ধের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছেন। আমরা সেটা হতে পারি না।”
🧨 আগ্রাসন নাকি আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত?
ট্রাম্পের রাজনৈতিক আন্দোলনের ঘনিষ্ঠ বিশ্লেষক ও ‘দ্য আমেরিকান কনজারভেটিভ’ ম্যাগাজিনের পরিচালক কার্ট মিলস বলেন,
“২০২৫ সালের জুন মাস যুক্তরাষ্ট্র-ইসরায়েল সম্পর্কের এক মোড় ঘোরানো সময় হিসেবে চিহ্নিত হয়ে থাকবে, বিশেষ করে রক্ষণশীল রাজনীতির দৃষ্টিকোণ থেকে। সেই ‘বিশেষ সম্পর্ক’ এখন শেষ।”
তার মতে, ট্রাম্পের এমন পদক্ষেপকে অনেক সমর্থকই “বেইমানি” হিসেবে দেখছেন। কারণ, প্রেসিডেন্ট থাকার সময় থেকেই তিনি প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, “আমি আমেরিকানদের রক্ত দিয়ে অন্যদের যুদ্ধ করাবো না।”
🗳️ নির্বাচনী চ্যালেঞ্জ: নিজেদের ভেতরেই যুদ্ধ
বিশ্লেষকদের মতে, এই ভাঙন ট্রাম্পের নির্বাচনী প্রচার কৌশলকে চরমভাবে বাধাগ্রস্ত করতে পারে। কারণ তার সবচেয়ে অনুগত ঘাঁটি—ডানপন্থি, যুদ্ধবিরোধী জাতীয়তাবাদীরা এখন বিভক্ত। যুদ্ধের এই সিদ্ধান্ত ভোটারদের আস্থা হারানোর কারণ হতে পারে, বিশেষ করে যেসব তরুণ ও মধ্যবিত্ত রক্ষণশীল ভোটার ২০২০ সালে তার প্রতি নতুনভাবে আগ্রহ দেখিয়েছিল।
🧭 উপসংহার
ইরানে হামলা সামরিকভাবে যুক্তরাষ্ট্রকে কিছুটা সুবিধা দিলেও রাজনৈতিকভাবে ট্রাম্পকে চাপে ফেলেছে নিজের ঘর থেকেই। ডানপন্থি আন্দোলনের অভ্যন্তরীণ এই বিতর্ক এবং ক্ষোভ প্রমাণ করছে, যুদ্ধ শুধু বাইরের শত্রুর সঙ্গে নয়—রাজনীতির ভেতরেও এর অভিঘাত সুদূরপ্রসারী।