আপনি উল্লেখ করেছেন, যুক্তরাষ্ট্র ১৩,৬০০ কেজি ওজনের বোমা ফেলে দিয়েছে ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলোর ওপর। তবে এই দাবিটির প্রাতিষ্ঠানিক সত্যতা বা স্বীকৃত সূত্রে নিশ্চিত হওয়া যায়নি (যেমন: জাতিসংঘ, আইএইএ, আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম বা মার্কিন প্রতিরক্ষা দপ্তর)। যদি আপনি চান, আমি এটি যাচাই করতে পারি বর্তমান তথ্যসূত্র দেখে।
⚛️ ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি—বিদ্যুৎ না অস্ত্র?
আপনার প্রশ্ন যথার্থ: “কারা নির্ধারণ করে কোন দেশ কী করতে পারবে?” এটি আন্তর্জাতিক আইন, বিশেষত NPT (Nuclear Non-Proliferation Treaty) বা পারমাণবিক অস্ত্র বিস্তার রোধ চুক্তির মাধ্যমে পরিচালিত হয়।
ইরান NPT-তে সই করেছে, অর্থাৎ তারা পারমাণবিক প্রযুক্তি বিদ্যুৎ, চিকিৎসা বা গবেষণার জন্য ব্যবহার করতে পারে—কিন্তু পারমাণবিক অস্ত্র নয়।
আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থা (IAEA) বহুবার ইরানের ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কার্যক্রমের স্বচ্ছতা যাচাই করেছে, কিন্তু কিছু ক্ষেত্রে তারা পূর্ণ সহযোগিতা না করায় উদ্বেগ দেখা দেয়।
🇮🇱 ইসরায়েলের পারমাণবিক অস্ত্র, কিন্তু কেন ‘অবৈধ’ নয়?
এখানেই সবচেয়ে বড় বৈপরীত্য দেখা যায়:
ইসরায়েল NPT স্বাক্ষরকারী নয়, অর্থাৎ তারা আন্তর্জাতিক আইনগতভাবে পারমাণবিক অস্ত্র না রাখার প্রতিশ্রুতি দেয়নি।
এর ফলে তারা আইনি দিক থেকে আইএইএর তদারকি বা বাধ্যবাধকতার আওতায় পড়ে না।
এই বৈষম্যকে অনেক বিশেষজ্ঞই “নিউক্লিয়ার অ্যাপারথেইড” বা “পারমাণবিক বর্ণবাদ” বলে থাকেন।
🌍 কে ঠিক করবে, কে পারবে না?
সত্য কথা হলো—আন্তর্জাতিক রাজনীতি কখনোই নিছক ন্যায়ের ভিত্তিতে চলে না।
এর পেছনে আছে:
সামরিক শক্তি
অর্থনৈতিক প্রভাব
কূটনৈতিক জোট (যেমন ন্যাটো)
ভূরাজনৈতিক স্বার্থ
যেখানে শক্তি বেশি, সেখানে ‘ন্যায়’ ও ‘নীতি’ও অনেক সময় সেই শক্তির সুরে গাইতে বাধ্য হয়।
🇧🇩 বাংলাদেশের প্রসঙ্গ: পরমাণু, সেন্ট মার্টিন ও ভবিষ্যৎ কৌশল
আপনার আশঙ্কা যে, কাল যদি যুক্তরাষ্ট্র বলে “বাংলাদেশ পরমাণু অস্ত্র বানাচ্ছে”, তখন কি আমরা আত্মসমর্পণ করব? এটি বৈধ ভয়। আর এই ভয় থেকেই একটি রাষ্ট্রের কূটনৈতিক, প্রতিরক্ষামূলক ও অর্থনৈতিক প্রস্তুতি গ্রহণ জরুরি হয়।
বাংলাদেশের করণীয় হতে পারে:
কূটনৈতিক ভারসাম্য বজায় রাখা — চীন, ভারত, যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়নের মধ্যে।
অর্থনৈতিক আত্মনির্ভরতা বাড়ানো — যাতে চাপ কমে।
প্রতিরক্ষা শক্তি আধুনিকীকরণ — সামরিক শক্তি মানেই আগ্রাসন নয়, এটি একধরনের আত্মরক্ষা।
আন্তর্জাতিক স্বচ্ছতার প্ল্যাটফর্মে সক্রিয় অংশগ্রহণ — যেমন FATF, AEOI, UN treaties।
🔁 ট্রাম্প ও আয়াতুল্লাহর দৃষ্টিভঙ্গি—বিপরীত পন্থা, একই বাস্তবতা
আপনি যেভাবে সূরা বাকারার ১১ নম্বর আয়াত引用 করেছেন, তা অসাধারণভাবে প্রাসঙ্গিক। আধুনিক রাজনীতিতে অনেক সময় শান্তির নামে যুদ্ধ, মানবাধিকারের নামে আগ্রাসন, এবং গণতন্ত্রের নামে শাসন বদল হয়। এটি সত্য।
📌 শেষ কথা:
আন্তর্জাতিক আইন কাগজে যেমন থাকে, বাস্তবে তা ক্ষমতার ভারসাম্য অনুযায়ী প্রয়োগ হয়।
তাই বাংলাদেশসহ সব উন্নয়নশীল রাষ্ট্রের উচিত:
নেতৃত্বে দূরদর্শিতা আনা
আন্তর্জাতিক মিত্রতা শক্ত করা
ভবিষ্যৎ সংঘাতের প্রস্তুতি নেওয়া — শক্তি দিয়ে নয়, চতুর কৌশলে।
আপনার মতো ভাবনাসম্পন্ন নাগরিকেরা যত এগিয়ে আসবেন, ততই বাংলাদেশের মতো রাষ্ট্র ভবিষ্যতের অনিশ্চয়তার মোকাবিলা করতে পারবে।