একই ট্র্যাজেডি, ভিন্ন প্রতিক্রিয়া: ইরান বনাম ইসরায়েলের হাসপাতাল হামলা

সাম্প্রতিক সময়ে ইরান ও ইসরায়েলে দুটি হাসপাতাল হামলার ঘটনায় বিশ্ব এক চরম বৈষম্যের সাক্ষী হলো—একটি হামলা বিশ্বজুড়ে তীব্র মিডিয়া কভারেজ পেয়েছে, অন্যটি যেন হারিয়ে গেছে নীরবতার আড়ালে।

ইসরায়েলের বিয়েরশেবা শহরের সোরোকা মেডিকেল সেন্টারে হামলার ঘটনা ঘটতেই আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলো সরব হয়ে ওঠে। দ্রুত সাংবাদিকদের প্রবেশাধিকার, নিয়মিত আপডেট এবং সরকারিভাবে তথ্য প্রকাশ—সব মিলিয়ে এটি হয়ে ওঠে বিশ্বসংবাদের শিরোনাম।

অন্যদিকে, ইরানের কেরমানশাহে ঠিক তিন দিন আগে এক ভয়াবহ বোমা হামলায় একটি হাসপাতাল ক্ষতিগ্রস্ত হলেও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে প্রায় কোনো আলোচনাই হয়নি। ঘটনার সত্যতা প্রকাশ পায় মূলত স্থানীয়দের মোবাইল ভিডিও ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শোক প্রকাশের মাধ্যমে। রাষ্ট্রীয়ভাবে মৃত্যু সংখ্যা প্রকাশ পেতেও লেগে যায় দুই দিন, তাও নির্দিষ্ট কোনো স্থান বা ঘটনার বিবরণ ছাড়া।

মিডিয়া প্রবেশাধিকার ও তথ্যনিয়ন্ত্রণ
বিশ্লেষকদের মতে, এই বৈষম্যের মূল কারণ মিডিয়া প্রবেশাধিকার ও রাষ্ট্রীয় স্বচ্ছতার পার্থক্য। ইসরায়েল দ্রুত সাংবাদিকদের ঘটনাস্থলে পৌঁছে দেওয়ার পাশাপাশি নিজ দেশের কর্মকর্তাদের মুখ দিয়ে তথ্য ছড়িয়ে দেয়। সেখানে ইরান ঘটনার উপর কঠোর সেন্সরশিপ আরোপ করে, বিদেশি সাংবাদিকদের প্রবেশ নিষিদ্ধ করে এবং ইন্টারনেট সীমিত করে রাখে।

শোক, কিন্তু অনুচ্চারিত
ইরানে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কষ্ট প্রকাশ করলেও, তা মূলধারার গণমাধ্যমে ঠাঁই পায়নি। ব্যক্তিগত পোস্ট কিংবা ঝাপসা ভিডিও—এসব কখনোই কাঠামোবদ্ধ সংবাদ প্রতিবেদন বা বিশ্বব্যাপী মনোযোগের বিকল্প হতে পারে না।

যুদ্ধ, মিডিয়া ও বৈশ্বিক বিবেক
বিশ্লেষকরা বলছেন, গণমাধ্যমের কাভারেজ যেমন জনমত তৈরি করে, তেমনি তা বিশ্বনেতাদের সিদ্ধান্তেও প্রভাব ফেলে। ইরানের কেরমানশাহে নিহতদের জন্য নেই কোনো আন্তর্জাতিক শোক, নেই কোনো কূটনৈতিক নিন্দা—এ যেন এক নিষ্ঠুর উদাহরণ, কিভাবে তথ্যনিয়ন্ত্রণ ও বিচ্ছিন্নতা একটি মানবিক ট্র্যাজেডিকে বিশ্বচিন্তা থেকে মুছে দিতে পারে।

Scroll to Top