দুই বছর আগেও যে শহর ছিল জীবন ও স্বপ্নে ভরপুর, আজ সেই গাজা সিটি পরিণত হয়েছে এক নিঃশব্দ শ্মশানে। যে ক্লাসরুমে শিশুদের কোলাহল ছিল, যে বাজারে মানুষের ভিড় লেগে থাকত, যে সমুদ্রতীরবর্তী ক্যাফেতে জীবনের ক্লান্তি ভুলে কফির কাপে স্বস্তি খোঁজা যেত—আজ সবকিছুই ধূসর ধ্বংসস্তূপে পরিণত।
হাজার বছরের ইতিহাসে সমৃদ্ধ গাজা সিটি—প্রাচীন সভ্যতার এক জীবন্ত সাক্ষী। শত শত প্রত্নস্থল, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির ধারক এই শহর একসময় ছিল ফিলিস্তিনিদের আশ্রয়স্থল। ১৯৪৮ সালে ইসরায়েলের প্রতিষ্ঠার সময় যে বিপুলসংখ্যক মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছিলেন, তাদের অনেকেই আশ্রয় নেন এই নগরীতে।
২০০৭ সালে হামাস গাজার নিয়ন্ত্রণ নিলে এই শহরকে তাদের প্রশাসনিক রাজধানী ঘোষণা করে। তখন থেকেই দীর্ঘ সংঘাত, অবরোধ ও রাজনৈতিক টানাপোড়েন ফিলিস্তিনিদের জীবনকে জটিল করে তোলে। তবু কাতারসহ কয়েকটি মধ্যপ্রাচ্যের দেশের সহায়তা এবং জাতিসংঘের ত্রাণে গাজার মানুষ টিকে থাকার এক শেষ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছিল।
কিন্তু হামাসের ইসরায়েল আক্রমণের প্রতিক্রিয়ায় শুরু হয় ইসরায়েলের নির্মম বিমান ও স্থল হামলা। কয়েক মাসের মধ্যেই গাজার প্রাণকেন্দ্র পরিণত হয়েছে এক আইনহীন ধ্বংসাবশেষে। ইসরায়েল নতুন করে ‘চূড়ান্ত অভিযান’ চালাতে প্রস্তুত, যেখানে লক্ষ্য হামাস যোদ্ধাদের নির্মূল করা। এই ঘনবসতিপূর্ণ শহরে সাধারণ মানুষ আজ বেঁচে থাকার জন্য মরিয়া লড়াইয়ের মুখে।
গাজার বাসিন্দা মাজদি আবু হামদি (৪০), চার সন্তানের জনক, ভাঙা জানালার ধুলোয় দম বন্ধ হয়ে আসা ঘরের ভেতরে বসেই বলেন,
“বিস্ফোরণের ধূলা এত ঘন যে নিশ্বাস নিতেও কষ্ট হয়। এমনকি কুকুরগুলোও বদলে গেছে। রাতের অন্ধকারে ওদের চিৎকার শুনি। এত লাশ খেতে খেতে তারা হিংস্র হয়ে গেছে—মানুষকেও আক্রমণ করছে।”
দুই দিন আগেই তার চোখের সামনে ২০টিরও বেশি কুকুর মিলে একটি বিড়ালকে ছিঁড়ে খেয়ে ফেলেছে। মাজদির কণ্ঠে অসহায়তার আভাস—
“এই শহর শুধু মানুষকেই নয়, পশুগুলোকেও বদলে দিয়েছে। জানি না, আমাদের মতো ওদের জন্যও কি ইসরায়েলি বাহিনী কোনো শেষ রাখবে!”
গাজা আজ শুধুই এক রক্তাক্ত স্মৃতি—যেখানে জীবন থেমে গেছে, কিন্তু মৃত্যু প্রতিদিন নতুন গল্প লিখছে।
