মোংলা বন্দরে গাড়ি আমদানিতে ভাটা: তিন অর্থবছরে ধারাবাহিক পতন

খুলনা, ২১ জুন ২০২৫:
কয়েক বছর আগেও বাংলাদেশে গাড়ি আমদানির শীর্ষ গন্তব্য ছিল মোংলা বন্দর। ২০২১-২২ অর্থবছরে বন্দরের মাধ্যমে আমদানিকৃত গাড়ির সংখ্যা ২১ হাজার ছাড়িয়ে গিয়েছিল, যা রেকর্ড গড়েছিল দেশের ইতিহাসে। কিন্তু এরপর থেকেই দৃশ্যপট পাল্টে যেতে শুরু করে। টানা তিন অর্থবছর ধরে গাড়ি আমদানিতে পতন চলছে—ডলার সংকট, উচ্চ মূল্যস্তর এবং ক্রেতার অনাগ্রহ এর মূল কারণ হিসেবে উঠে এসেছে।

বাংলাদেশ রিকন্ডিশন্ড ভেহিকেলস ইমপোর্টার্স অ্যান্ড ডিলারস অ্যাসোসিয়েশন (বারভিডা) জানিয়েছে, বৈদেশিক মুদ্রার সংকট, এলসি খোলার জটিলতা এবং বাজারে চাহিদা হ্রাসের কারণে আমদানিতে স্থবিরতা দেখা দিয়েছে।

গত কয়েক বছরের চিত্র
মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের তথ্য অনুযায়ী:

২০০৮-০৯ অর্থবছর: গাড়ি আমদানি ছিল মাত্র ২৫৫টি

২০০৯-১০ অর্থবছর: বেড়ে দাঁড়ায় ৩,১১৯টি

২০২১-২২ অর্থবছর: সর্বোচ্চ ২১,০০০+ গাড়ি

২০২২-২৩ অর্থবছর: নেমে আসে ১৩,৫৭৬টিতে

২০২৩-২৪ অর্থবছর: কিছুটা বেড়ে ১৫,৩৪০টি

২০২৪-২৫ অর্থবছরের মে পর্যন্ত: আমদানি হয়েছে ১০,৭৪২টি গাড়ি

ব্যবসায়ীদের অভিমত
খুলনা কার জোনের মালিক পারভেজ হক বলেন,

“ডলারের দাম বাড়ায় গাড়ির আমদানি খরচ বেড়েছে। আগে যে এক্সিও গাড়ি ১৫-১৬ লাখ টাকায় বিক্রি হতো, এখন তা ২৪-২৫ লাখে গিয়ে ঠেকেছে। ক্রেতারা সরে গেছে বাজার থেকে।”

বারভিডা সভাপতি আব্দুল হক বলেন,

“আমদানি ৪০ শতাংশ কমেছে। মূলত ডলার সংকট, শুল্ক বৃদ্ধি এবং সরকারের সাম্প্রতিক রদবদল ব্যবসার ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। বাজারে যাদের হাতে অর্থ ছিল, তারাও নেই।”

বন্দর কর্তৃপক্ষের বক্তব্য
মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের ট্রাফিক পরিচালক মো. কামাল হোসেন জানান,

“আমদানির সংখ্যা কমলেও বন্দরের অবকাঠামো, শেড, নিরাপত্তা ও খালাস ব্যবস্থাপনায় কোনো ঘাটতি নেই।”

উপসচিব মাকরুজ্জামান বলেন,

“পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর সময় ও খরচ কমেছে। ফলে মোংলার গুরুত্ব আরও বেড়েছে। তবে বৈদেশিক মুদ্রার বাজার ও ভোক্তার ক্রয়ক্ষমতা পুনরুদ্ধার না হওয়া পর্যন্ত আমদানিতে গতিশীলতা ফিরবে না।”

ভবিষ্যতের সম্ভাবনা
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, মোংলায় গাড়ি আমদানির এই ভাটা সাময়িক না স্থায়ী—তা নির্ভর করছে তিনটি বিষয়ের ওপর:
১. ডলার বাজারের স্থিতিশীলতা
২. ভোক্তাশ্রেণির পুনরুজ্জীবন
৩. সরকারপ্রদত্ত নীতিগত সহায়তা

অর্থনীতিবিদদের মতে, গাড়ি শিল্প ও আমদানি খাতকে চাঙা করতে হলে ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ, কর প্রণোদনা ও সহজ এলসি ব্যবস্থার দিকে নজর দিতে হবে।

Scroll to Top