বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ২৪তম লং কোর্সের কর্মকর্তা মেজর জেনারেল (বরখাস্ত) জিয়াউল আহসান (বিএ-৪০৬০) দীর্ঘ চাকরিজীবনে নানা বিতর্ক ও অভিযোগের জন্ম দিয়েছেন। সাবেক সেনাপ্রধান ইকবাল করিম ভূঁইয়া (আইকেবি) তার স্মৃতিচারণে লিখেছেন, র্যাবে কর্মরত অবস্থায় জিয়াউল আহসান বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, গুম ও অপহরণের সঙ্গে সরাসরি জড়িত ছিলেন।
🔎 সাবেক সেনাপ্রধানের বর্ণনা
ইকবাল করিম ভূঁইয়া তার ফেসবুক পোস্টে জানান—
- র্যাবে কর্মরত অফিসাররা অল্প সময়ের মধ্যেই “পেশাদার খুনি” হয়ে ফিরতেন।
- তিনি প্রধানমন্ত্রীকে প্রেষণে থাকা সেনা অফিসারদের ফিরিয়ে আনার প্রস্তাব দেন; প্রধানমন্ত্রী মৌখিকভাবে সম্মত হলেও বাস্তবে তা হয়নি।
- কর্নেল (পরবর্তীতে লেফটেন্যান্ট জেনারেল) মুজিবের মাধ্যমে জিয়াউল আহসানকে “ক্রসফায়ার” বন্ধের নির্দেশ দিলেও, তা কেবল সংবাদমাধ্যমে চাপা পড়ে যায়—ঘটনা চলতেই থাকে।
- পরবর্তীতে জিয়াউল আহসানকে সেনানিবাসের গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় “অবাঞ্ছিত” ঘোষণা করেছিলেন তিনি।
একপর্যায়ে আইকেবি লেখেন, সেনা গোয়েন্দা কর্মকর্তারা জিয়াউল আহসানকে বোঝানোর চেষ্টা করলেও তিনি কখনো কর্ণপাত করেননি। তাকে বর্ণনা করা হয় “পাথরভর্তি মাথার মানুষ” হিসেবে।
⚔ ক্যারিয়ার ও অপরাধের অভিযোগ
- ২০০৯: র্যাব-২ এ টুআইসি হিসেবে যোগ দেন।
- ২০১১-১৩: র্যাব সদর দপ্তরে গোয়েন্দা বিভাগের প্রধান।
- ২০১৩: কর্নেল পদে পদোন্নতি, র্যাবের এডিজি। শাপলা চত্বরে হেফাজতের সমাবেশে অভিযানের নেতৃত্ব দেন।
- ২০১৪: নারায়ণগঞ্জের “৭ খুন” ঘটনার সময় তার নির্দেশের উল্লেখ পাওয়া যায়।
- ২০১৫: ব্রিগেডিয়ার জেনারেল, পরবর্তীতে এনএসআই পরিচালক।
- ২০১৬: এনটিএমসির পরিচালক (স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীন টেলিকম মনিটরিং সেন্টার)।
- ২০২১: মেজর জেনারেল পদে পদোন্নতি, এনটিএমসির মহাপরিচালক।
🕳 গুম ও হত্যা অভিযোগ
মানবাধিকার সংগঠন ও গুম কমিশনের রিপোর্টে অভিযোগ করা হয়—
- ২০০৯–২০২৪ পর্যন্ত হাজারো গুম ও বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডে সরাসরি নেতৃত্ব দিয়েছেন জিয়াউল আহসান।
- অন্তত ১,০৩০ জনকে হত্যা করার অভিযোগ আছে তার টিমের বিরুদ্ধে।
- অপহৃতদের অনেককে নির্যাতনের পর হত্যা করে নদীঘাটে লাশ গুম করা হতো।
- এ পুরো প্রক্রিয়ায় প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা উপদেষ্টা মেজর জেনারেল তারিক সিদ্দিক ছিলেন তার প্রধান পৃষ্ঠপোষক।
🟥 আতঙ্কের প্রতীক
মানবাধিকার কর্মীদের মতে, শেখ হাসিনার শাসনামলে অপহরণ, গুম, বিচারবহির্ভূত হত্যা, টেলিফোন আড়িপাতা ও নজরদারি—সব ক্ষেত্রেই জিয়াউল আহসান ছিলেন সক্রিয়। সাবেক সেনাপ্রধান আইকেবি পর্যন্ত আশঙ্কা করতেন, জিয়াউল আহসান তার জীবনকে হুমকির মুখে ফেলতে পারেন।