আন্তর্জাতিক ডেস্ক | আরটিভি নিউজ | শনিবার, ২১ জুন ২০২৫
বিশ্বজুড়ে ইন্টারনেট সংযোগ পর্যবেক্ষণকারী প্রতিষ্ঠান নেটব্লকস জানিয়েছে, ইরান টানা ৬০ ঘণ্টার বেশি সময় ধরে আন্তর্জাতিক ইন্টারনেট সংযোগ থেকে বিচ্ছিন্ন রয়েছে। এ ঘটনায় জনগণের যোগাযোগ, মত প্রকাশ এবং নিরাপত্তা সতর্কতা অনুসরণ করার সক্ষমতা মারাত্মকভাবে বিঘ্নিত হয়েছে।
ইন্টারনেট পর্যবেক্ষণের তথ্য
নেটব্লকস-এর সর্বশেষ পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, ইরান গত কয়েক দিন ধরে বিশ্বব্যাপী ইন্টারনেট ট্র্যাফিক থেকে কার্যত বিচ্ছিন্ন। ব্যবহারকারীরা কোনো আন্তর্জাতিক ওয়েবসাইটে প্রবেশ করতে পারছেন না এবং ইন্টারনেটভিত্তিক যোগাযোগব্যবস্থা কার্যত অকার্যকর হয়ে পড়েছে।
নেটব্লকস এক বিবৃতিতে জানায়,
“ইরানে চলমান এই সংযোগ বিচ্ছিন্নতা জনসাধারণের মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, তথ্যপ্রাপ্তি এবং যোগাযোগের মৌলিক অধিকারে সরাসরি হস্তক্ষেপ করছে।”
সরকারি ব্যাখ্যা: প্রতিরক্ষা পদক্ষেপ
ইরান সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, এই বিচ্ছিন্নতা কোনো কারিগরি ত্রুটি নয়; বরং পরিকল্পিতভাবে নেওয়া এক প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা। সরকারের দাবি, ইসরায়েলের সাইবার হামলার আশঙ্কা মাথায় রেখে দেশব্যাপী ইন্টারনেট নিয়ন্ত্রণের এই পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে।
এক সরকারি মুখপাত্র বলেন,
“সাম্প্রতিক সময়ে আমাদের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো ও তথ্যভাণ্ডারকে লক্ষ্য করে ইসরায়েলের সাইবার আক্রমণের প্রচেষ্টা রেকর্ড করা হয়েছে। এসব আক্রমণ রুখতে আমরা প্রতিরোধমূলক পদক্ষেপ নিয়েছি।”
মানবাধিকার ও মতপ্রকাশের ওপর প্রভাব
বিশ্লেষকরা বলছেন, ইন্টারনেট সংযোগ বন্ধ করে দেওয়া শুধু সাইবার নিরাপত্তার প্রশ্ন নয়, এটি জনগণের তথ্যপ্রাপ্তি ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতার ওপর এক বড় ধরনের আঘাত। বিশেষ করে রাজনৈতিক অস্থিরতা বা সংঘাতের সময়ে এ ধরনের নিয়ন্ত্রণ অনেক সময় সরকারবিরোধী মত দমনের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
পূর্ব অভিজ্ঞতা ও আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া
ইরানে অতীতেও সরকারবিরোধী আন্দোলনের সময় ইন্টারনেট বন্ধ করে দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। ২০১৯ সালে জ্বালানি মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে দেশব্যাপী বিক্ষোভ চলাকালে প্রায় এক সপ্তাহের বেশি সময় ইন্টারনেট বন্ধ ছিল। সেই সময়ও আন্তর্জাতিক মহলে ব্যাপক সমালোচনা হয়।
এবারের ঘটনাকেও নজরদারিতে রেখেছে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলো। বিশেষ করে এমন একটি সময়ে, যখন ইসরায়েল ও ইরানের মধ্যে সামরিক উত্তেজনা চরমে পৌঁছেছে, তখন ইন্টারনেট বিচ্ছিন্নতা আরও গভীর উদ্বেগের জন্ম দিচ্ছে।
বিশ্লেষণ:
এই দীর্ঘ সময়ের ইন্টারনেট বিচ্ছিন্নতা শুধু নিরাপত্তা নয়, ইরানের ভেতরে রাজনৈতিক গতিপ্রবাহ এবং জনগণের স্বাধীনতা নিয়েও প্রশ্ন তুলছে। ভবিষ্যতে এমন সিদ্ধান্তের প্রভাব কেমন হবে, তা নির্ভর করবে আন্তর্জাতিক চাপ, অভ্যন্তরীণ প্রতিক্রিয়া এবং সরকার কতটা তথ্যস্বচ্ছতার নীতি মেনে চলে তার ওপর।